সূরা কুরাইশ আল কুরআনের ১০৬তম সুরা। এটি মক্কায় অবর্তীর্ণ। এর আয়াত সংখ্যা ৪টি। এ সুরার প্রথম আয়াতের শেষ শব্দ কুরাইশ থেকে এর নামকরণ করা হয়েছে সূরা কুরাইশ।
শানে নুযুল
মক্কা নগরীতে পবিত্র কা'বা ঘর অবস্থিত। কুরাইশরা এ গৃহের দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করত। তারা ছিল ব্যবসায়ী। তাদের ব্যবসায়ী কাফেলা গ্রীষ্মকালে সিরিয়া ও শীতকালে ইয়েমেনে গমন করত। আর পবিত্র কা'বা গৃহের পরিচর্যার দায়িত্ব পালনের কারণেই তারা ইয়েমেন ও সিরিয়ায় নিরাপদে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারত। আবরাহার আক্রমণ থেকেও তারা রক্ষা পেয়েছিল। এ সমস্ত নিয়ামত তারা পেয়েছিল শুধুমাত্র কা'বা গৃহের সাথে থাকতো বলেই। তাই তাদের এই নিয়ামতের উল্লেখপূর্বক এই ঘরের প্রভু তথা আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত করার আহবান করে এই সুরা অবতীর্ণ হয়।
ব্যাখ্যা
মক্কা ছিল একটি অনুর্বর মরুঅঞ্চল। সেখানে চাষাবাদ হতো না। এমন বাগবাগিচাও ছিলো না, যা থেকে ফল ফলাদি পাওয়া যেতে পারে। সেখানে খাদ্য-সামগ্রী বাইরে থেকে আনা হতো। তাই বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কুরাইশরা বিদেশ সফর করত। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ সংগ্রহ করতো। এর ওপরই মক্কাবাসীদের জীবিকা নির্ভরশীল ছিল। কুরাইশরা কাবার তত্ত্বাবধায়ক ছিল। ফলে সকলের শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র ছিল। তাদের আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে কেউই বাঁধা দিত না। দস্যু ও শত্রুদের আক্রমণের ভীতি হতে তারা নিরাপদ ছিল। আল্লাহ তা'আলা মক্কাবাসীদের প্রতি এসব অনুগ্রহ উল্লেখপূর্বক তাদের কৃতজ্ঞতা আদায় করার নির্দেশ প্রদান করেন।
কুরাইশদের মর্যাদা
আল্লাহ তা'আলা কুরাইশদের সাতটি বিষয়ে মর্যাদা দান করেছেন;
(১) সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল (সা.) তাদের মধ্য হতে এসেছেন;
(২) নবুওয়াত তাদের মধ্য হতে এসেছে;
(৩) কাবাগৃহের তত্ত্বাবধান;
(৪) হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব পালন;
(৫) আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে হস্তীবাহিনীর বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন;
(৬) উক্ত ঘটনার পর কুরাইশরা দশবছর যাবত আল্লাহ তা'আলা ব্যতীত কারো ইবাদাত করেনি;
(৭) আল্লাহ তা'আলা তাদের বিষয়ে কুরআনে পৃথক একটি সূরা নাযিল করেছেন যাতে তারা ছাড়া আর কারো আলোচনা করা হয়নি।
শিক্ষা ১. আল্লাহ তা'আলা ব্যবসায়িক সফরে কুরাইশদের নিরাপত্তা দিয়ে তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। নিরাপত্তা প্রদানের মালিক অল্লাহ। ২. আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করলে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। ৩. আল্লাহ তা'আলা কুরাইশদের অসংখ্য অগণিত নিয়ামত দান করেছেন। ৪. প্রাপ্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা। ৫. মহান আল্লাহর ইবাদাত করা। |
দলগত কাজ শিক্ষার্থীরা সূরা কুরাইশ শুদ্ধরূপে তিলাওয়াত করবে। এরপর পরস্পরের মধ্যে এ সুরাটির শিক্ষা আলোচনা করবে |
আরও দেখুন...